আশিকুজ্জামান রয়েলঃ
এখন ২০৭৪,
রায়হান আর আমি একটা কফিশপে বসে আছি। রায়হান
কফিতেই বেশ অভ্যস্ত। আমার নজর সেকেলে রক্তবর্ণ উষ্ণ
আদাজলের দিকে। বিকাল প্রায় সাড়ে ছটা অর্থাৎ
দিনের বিদায়লগ্ন। একটা সিগারেট ধরালাম। তবে
রায়হানকে নিকোটিনের সান্নিধ্যে যেতে দেইনি।
ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন অামার হাতেখড়ি। কৌতুহল
বশতই বলা যেতে পারে। তার পর থেকে সাথেই আছে।
সবেতো বয়স আটাত্তর হল। আসলে কবি দুখুর মতো বয়সের
সাথে আমি যৌবনের মিল খুঁজি না। যৌবন যেন ঠিক মনের
বেপার। এইতো সেদিন মেট্রিক দিলাম। দুহাজার তেরোর
দিকে। এখনও খুব পরিষ্কার মনে আছে বিদায় অনুষ্ঠানের
কথা। কতইনা আনন্দ ফুর্তি করলাম দিনটিতে। পরীক্ষার
সপ্তাখানিক আগে প্রবেশপত্র হারিয়ে হারিয়ে
ফেলেছিলাম। খোঁজাখুজির কমতি না থাকলেও
প্রবেশপত্রের সাক্ষাত আর মেলেনি। আবার ইন্টার
পরীক্ষার সময় বাধালাম আরেক কান্ড। কি মনে করে যেন
প্রাকটিকেল পরীক্ষা দিলাম না। যা হবার তাই হলো,
অর্থাৎ গ্যাড়া মারলাম। বাড়ি থেকে আমাকেতো বেরই
করে দেয়। অবশ্য বেপারটা আমি বেশ উপভোগ
করেছিলাম। ওইটিই ছিলো জীবনের প্রথম ফেলের
অভিজ্ঞতা। কতইনা খামখেয়ালি ছিলাম। ছিলাম বললে
ভুল হবে, আমিতো এখনো হেয়ালি স্বভাবের। একে একে
অনেক বন্ধুই জীবন থেকে ছুটি নিয়েছে। তাছাড়া যারা
আছে সবার সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। গেল বছর
অঙ্কনটাও সড়ক দূর্ঘটনায় চলে গেল। এখন আমার খুব
কাছের বন্ধু বলতে রায়হানকেই বুঝি। আমার ছেলের
ছেলে অর্থাৎ আমার নাতি। ওর সাথেই বেশ চলে যাচ্ছে।
কাঁশফুনও হারিয়ে গেছে দশ সাল হলো। সেবার হঠাৎ ওর
ক্যান্সার ধরা পড়ে। ক্যামোথেরাপিসহ আরো কতকি
ডক্তাররা করল কিছুতেই কিছু হলোনা।শেষমেশ জয়টা
ক্যান্সারেরই হয়েছিলো। বাবা মার পছন্দ করা মেয়ে
ছিলো কাঁশফুন। বিয়েতেও আমার সায় ছিলোনা। দিব্যি
এতগুলো বছর আমার মত একটা অকালকুষ্মাণ্ডের সাথে
কিভাবে থাকলো বুঝি না। কোনদিন কোন অভিযোগ
শুনিনি। সুধু নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গেছে। এখনও
বাসছে কিনা জানিনা, জানার চেষ্টাও করিনি। যেদিন
ও মারা যায় সেদিন আকাশে অনেক মেঘ থাকলেও বৃষ্টি
ছিলো ঝিরিঝিরি,তারিখটি পনেরোই শ্রাবণ।
কেন যেন আজ সেই সুচতুর কিশোরীর(কাঁশফুন নয়) কথা মনে
পড়ে।যাকে দেখেছিলাম কৈশরের শেষ ধাপে। তার
মুখের অবয়ব কিছুটা ঝাপসা থাকলেও কপালের ছোট্ট
তিলটির কথা কিন্তু যথেষ্ট মনে আছে। শেষবার
দেখেছিলাম সেই ২০২৯ এর দিকে তার স্বামীর সাথে
মৌচাকের একটা রেস্তোরাঁয়। হয়তো এখন জীবনের পড়ন্ত
বিকেলে চাওয়া পাওয়ার হিসেব কষছে নয়তো সমস্ত
সাঙ্গলীলা ত্যাগ করে ওপারে পাড়ি জমিয়েছে। ভাবতে
অনেকটা অবাক লাগে পৃথিবীর বুক থেকে একদিন
হারিয়ে যেতে হবে। সেদিনও পাখিরা গান করবে,
ফুলেরা গন্ধ বিলাবে,নদীর বুকে চাঁদটা বিলীন হয়ে
যাবে, বসন্তগুলো আমি হীনা অতীত হতে থাকবে,বৃষ্টির
ফোটারা পরম আদরে আছড়ে পড়বে ধরণীর বুকে, সূর্য তার
আপন নিয়মে পূব দিগন্তে হাসি ছড়াবে। দেখার জন্য
একমাত্র সুধু আমিই থাকবোনা। এছাড়া সবকিছু আপন
নিয়মে চলমান থাকবে। হঠাৎ রায়হানের ডাকে আমার
ভাবনাচ্ছেদ ঘটলো। ও বললো দাদাভাই নিলাদ্রী
আসছে। আমি বললাম আরে ভয়ের কিছু নেই, গিয়ে সুধু
প্রপোজটা করনা। বললামতো হয়ে যাবে। এগিয়ে চলেছে
রায়হান,,,,, ,,