ঝর্ণা দে (ঝুনু): অবাক ব্যাপার! সাইকিয়াট্রিষ্ট ডাঃ সত্যিই বিস্ময়ে হতবাক! খুব পরখ করে রোগীনিকে দেখছে আর তথ্য নিচ্ছে ডাক্তার। বহু ফোবিয়া রোগী দেখেছে কিন্তু জোৎস্না ফোবিয়া? বিস্ময় কপালে একটু ভাঁজ পড়ল ডাক্তারের।
রোগীনিকে প্রশ্ন করছে নিরুত্তর শুভ্রা। ওর নাম শুভ্রা। যা বলার সদ্য বিবাহিত স্বামী বলছে। ভাল বিয়েহয়েছে শুভ্রার। একটা সুন্দরী, আধুনিকা মেয়ে বলতে যা বোঝাই সবই আছে শুভ্রার মধ্যে।সেদিক দিয়ে একটা শিক্ষিতা সুন্দরী মেয়ের যা যা কাম্য সবই পেয়েছে সে। এক কথায় সুদর্শন বর, বরের ভাল বেতনের চাকুরী আবার বরটি তেমন রোমান্টিক, বলা যেতে পারে এক জোড়া “কপোত কপোতী “মানে সুখী পরিবার।
“জোৎস্না “মানেই একটা রোমান্টিক ব্যাপার -স্যাপার। যা নিয়ে কবি সাহিত্যিকদের লেখায় ঝড় ওঠে, কবিতা আর কাব্যের ফুলঝুড়ি ঝরে। নতুন প্রেমিক -প্রেমিকা হলে তো কথায় নেই। জোৎস্নার আলো ছায়াতে লুকোচুরি খেলে, তন্ময় হয়ে হারিয়ে ফেলে নিজেদের। আর যদি পূর্নিমার জোৎস্না হয় তোআরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। জোৎস্না উপভোগ করতে কে না চাই। আবাল -বৃদ্ধ -বনিতা দুচোখ ভরে উপভোগ করে ঈশ্বরের এই অকৃপন ও অপূর্ব দান।
আর এ জোৎস্না কে নিয়ে শুভ্রার বড় ভয়, বড় অসুখ। বর বেচারীর শান্তি নেই। নব দম্পতি পূর্নিমার শুভ্র জোৎস্না য় হারিয়ে যেতে চাই, গাইতে ইচ্ছে করে “কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা “…….”মিনি হানিমুনের স্বাদ পেতে চাই। কখনও ছাদে, কখনও বেলকোনিতে, কখনওবা খোলা নির্জন রাস্তায়। মন চাইলে হবে কি? বিধি বাম।শুভ্রা জোৎস্না সহ্য করতে পারে না।মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারে না। অতীতের কিছুস্মৃতি ভরা দিন,কিছু মুহূর্ত আর নিজের করা প্রতারনা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় নিজেকে।
একদিন শুভ্রা নিজের নামের স্বার্থকতা রেখে “সাজিদের “হাতে হাত রেখেছিল প্রথমএই শুভ্র জোৎস্নাতে। খেলত লুকোচুরি এই জোৎস্নায়, হারিয়ে যেত তেপান্তরে সাজিদের হাত ধরে। সাজিদের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিত, আর গায়ের গন্ধ নিত। পরম মমতায় জড়িয়ে রাখত নিজেকে, সাজিদের বুকে। অবাক জোৎস্নায় লুটোপুটি খেত সাজিদের সাথে।
কিন্তু আজ শুভ্রা নিজের নামের স্বার্থকতা রাখতে অপারক। জোৎস্না কে সে বড্ড ভয় পায়, ভয় পায় জোৎস্নার শুভ্র ও পবিত্র আলোকে। তাকাতে পারেনা, চোখ মুখ বন্ধ করে চিৎকার করে,সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে।
হয়তবা, পরিবারের চাপে কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে সাজিদের জোৎস্নার মত শুভ্র ভালবাসাকে উপেক্ষা করে নতুন সাজিদের হাত ধরেছে শুভ্রা। তবুও সাজিদের প্রেমের নূন্যতম সন্মান কিংবা শুভ্র জোৎস্নার অভিশাপে “শাপগ্রস্থ “শুভ্রা “আর জোৎস্না দেখে না”।
ডাক্তার কিছু ঔষুধ লিখে দিলেন। শুভ্রার স্বামীকে বললেন, শুনুন মিঃ পেসেন্ট জ্যোৎস্না দেখতে না চাইলে জোর করবেন না। তবে মাঝে মাঝে আপোষে চেষ্টা করে দেখবেন। ও আর একটি কথা আপনার স্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চেষ্টা করুন, কেন সে এমন আচরন করে। আর জ্যোৎস্না নিয়ে তার মনের ভিতরে কষ্টের কোন জায়গা আছে কিনা?
এখনো নিরুত্তর শুভ্রা……!
(সংক্ষিপ্ত প্রকাশ)