আরিফুর রহমান দোলন: ঢাকা কলেজে আমরা তখন। ১৯৯১ সাল। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছি। উত্তর ছাত্রাবাসে থাকি। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বাংলা ক্লাস ভীষণ টানতো আমাদের। আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসও বাংলাে পড়াতেন। ক্লাস চলছে। মিছিলও চলছে। পাল্টাপল্টি। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল। বিএনপি ক্ষমতায়, তাই পেশিশক্তিতে এগিয়ে ছাত্রদল। কিন্তু ছাত্রলীগের শক্তিও কম নয়। মিছিল টানে। হাতের লেখা কিঞ্চিত ভালো, মাঝেমধ্যেই ডাক পড়ে দেওয়াল লিখনে। কতবার লিখেছি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। স্লোগানে গলা মিলিয়েছি। বন্ধু মনিরুজ্জামান মনির শুরু থেকেই মিছিলের সামনের সারিতে। ছাত্রসংসদের নির্বাচন ঘনিয়ে এলো। ছাত্রলীগের প্যানেল মনোনয়ন নিয়ে কত কি। শামীম-চিনু প্যানেল প্রায় নিশ্চিত। কয়েকরাত নির্ঘুম নেতারা। আশরাফুল ইসলাম মারুফ ভাইয়ের কলাবাগানের বাসা ঘিরে কত উত্তেজনা টেনশন। মারুফ ভাই তখন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি। শেষমেষ শাহেদ-সংগ্রাম পরিষদ হলো ছাত্রলীগের। বন্ধু মনির নাট্য সম্পাদক পদে মনোনয়ন পেলো।
নির্বাচন নিয়ে অনেক কান্ড হলো। হুমকি, পেশিশক্তি প্রদর্শন। ছাত্রলীগকে প্রচারে বাঁধা। আমাদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়া। ছাত্রদলই পাশ করলো। তবে ছাত্রলীগের প্যানেলে বন্ধু মনির বিপুল ভোটে নাট্য সম্পাদক হয়েছিল। আরা জীবনবাজি রেখে কাজ করেছিলাম।
তখন মনিরসহ আরো কয়েকজন বন্ধু প্রায় প্রতিদিনই যেতাম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বাসভবনে, নেতাদের সান্নিধ্য পেতে। ঢাকা কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসের কমিটি হলো ছাত্রলীগের। সহ-সভাপতি করা হলো আমায়। পিতামাতার একমাত্র সন্তান আমি। ঢাকা কলেজে তখন অস্ত্রের ঝনঝনানি। প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতা সহপাঠী বন্ধুরা পর্যন্ত অস্ত্র হাতে রুমে এসে শাসিয়েছে। ভয় পাইনি। তবে খবর চাপাও থাকেনি। বাবা-মা খাবড়েছেন। অষ্টম শ্রেণীতে যখন পড়ি তখন ছাত্রলীগের বড় ভাইদের পরামর্শে নিয়মিত দেওয়াল লিখনের শুরু এবং অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীনই থানা ছাত্রলীগৈর কার্যকরী কমিটির সদস্য। অন্যথা হয়নি উচ্চ শিক্ষার্থে ভারত যাওয়ার পরেও। পশ্চিমবঙ্গে পাঠরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থী যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত তারা সম্মেলন করেন। আমীর হোসেন আমু, ইসহাক আলী খান পান্না, আ ক ম জামালউদ্দীনকে অতিথি করে। শাহাদাত হোসেন নিপুকে সভাপতি আর দেবাশীষ হালদার সাধারণ সম্পাদক। আমাকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
লেখাপড়ার পাঠ চুকিযে সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকি। পেশায় রাজনৈতিক পরিচয়কে কখনো সামনে টানিনি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করি, রাজনৈতিক বিশ্বাস যাইহোক না কেন যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন অথবা এক দু’বার সরকার প্রধানের সঙ্গে বিদেশ সফর করেছেন তাদেরকেই প্রকৃত বন্ধু ভাবেন কিছু সংশ্লিষ্টরা।
২০০৪ সালে সুমন মাহমুদ প্রথম আলো ছেড়ে যায় যায় দিন পত্রিকায় যোগ দেন। আমাকে বিএনপি বিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিজামী-মুজাহিদ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে বহুবার প্রতিবেদন লিখেছি। লিখেছি বিশ্লেষনধর্মী আরো অনেক অনেক প্রতিবেদন। তৎকালীন চিফ হুইপ পুত্রের হুমকি, থানায় জিডিসহ অনেক গঞ্জনা সয়েছি। বিশেষ আনুকূল্যে তখনও প্লট নেওয়ার চেষ্টা করিনি। এখনো না। রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন না এমন অনেকেই কিন্তু এই সরকারের আমলে প্লট নিয়েছেন বিশেষ আনুকূল্যে। ওসব প্রসঙ্গে যাবোনা।
দেশ স্পষ্টত দু”ভাগে বিভক্ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও বিপক্ষে। আমার অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আওয়ামী লীগই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে।
(লেখাটি বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান দোলনের ফেসবুক থেকে নেওয়া)