মো. মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম:
কাঙ্ক্ষিত মেয়েকে বিয়ে করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীকান্ত দাস শিশির (৩৫) নামে এক যুবক। কিন্তু তার আত্মহত্যার পর মা ও আগের সংসারের তিন বছর বয়সী মেয়েকে কে দেখবে? এই আশঙ্কায় তাদের গলাকেটে হত্যা করে। পরে অবশ্য আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ওই যুবক।
মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক শিশিরকে রক্তাক্ত অবস্থায় আটক এবং শিশিরের মা সুন্দরী দাস (৫৫) ও মেয়ে শ্রাবন্তীর মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যার পর শ্রীকান্ত নিজেও গলায় ব্লেড চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হতবিহ্বল হয়ে লাশের পাশে বসেই পার করেছে সারা রাত।
হত্যাকাণ্ডের পূর্বে শ্রীকান্ত দাস পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানী থানার তারাইল গ্রামের শান্তি নামে একটি মেয়েকে দায়ী করে চিরকুট লিখে রাখে। পুলিশ সেই রক্তমাখা চিরকুটও উদ্ধার করেছে।
পুলিশ আহত শিশিরকে চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে পাহারায় রেখেছে। শ্রীকান্তর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার (নতুন পাটকেলঘাটা) খলিশাখুলি গ্রামে বলে জানা গেছে। সে একটি পণ্য বিপণনকারী কোম্পানির সেলস্ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে বোয়ালমারীতে চাকরি করতে আসে। সেই সুবাদে গত ৫/৬ মাস যাবত উপজেলার বড় কামারগ্রামের বিভুতি ভুষণ সাহার বাড়িতে মা ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকত এবং এখানে শুরু থেকেই নিজের মেয়েকে ভাগনি হিসেবে পরিচয় দিত।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শ্রীকান্ত জানায়, একটি মেয়ের সাথে বিয়ের কথা চলছিল। মাস তিনেক আগে হঠাৎ করে ঐ মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে হতাশায় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শিশির আত্মহত্যা করলে তার মা ও মেয়েকে কে দেখবে, তারা কি খাবে? সেই জন্য গভীর রাতে সে প্রথমে তার মাকে ওষুধের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে ইনজেকশান দিয়ে অজ্ঞান করে গলায় রশি পেচিয়ে হত্যা করে। পরে মেয়েকে ব্লেড দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ইন্সপেক্টার (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম শ্রীকান্ত দাস শিশিরের বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, আমরা ঐখানকার থানার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শিশিরের বাবা নেই। এক বোন আছে, বিবাহিত। বেশ কিছুদিন পূর্বে শ্রীকান্তের বউ অন্যত্র চলে যাওয়ায় ভিটে মাটি বিক্রি করে তারা চলে আসে। চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় মা ও মেয়েকে নিয়ে অবস্থান করে। বোয়ালমারী এসে সে নিজের মেয়েকে ভাগনি পরিচয় দেয়। শ্রীকান্তের ঘর থেকে রক্তমাখা ব্লেড, সিরিঞ্জ, রক্তমাখা একটি চিরকুটসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। বউ চলে যাওয়া, অন্যত্র বিয়ে না হওয়া ইত্যাদি কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে শ্রীকান্ত এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমরা ধারনা করছি। তদন্তে আরো কিছু বেরিয়ে আসবে।
অন্যদিকে শ্রীকান্তের লেখা চিরকুটে পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানী থানার তারাইল গ্রামের সনজিত সরকারে মেয়ে শান্তির মোবাইলে কথা বলে জানা যায়, স্বামী পরিত্যক্তা শান্তি ৪ বছরের একটি মেয়েসহ বাবার বাড়িতে থাকে এবং পার্শ্ববর্তী রামদিয়া কলেজে অনার্স পড়ছে। গত রোজার ঈদের আগে বিয়ের জন্য শান্তিকে দেখতে যায় শ্রীকান্ত দাস শিশির। শান্তি জানান, তাকে শ্রীকান্তর পছন্দ হয়। এবং বিয়ের জন্য কথাবার্তা চলে। শ্রীকান্তের পূর্বের বিয়ে বা বাচ্চা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না শান্তি বা তার পরিবার। কিছুদিন পরে তারা জানতে পারে শ্রীকান্তের অনেক দেনা-দায়েক আছে। তখন শ্রীকান্তকে বিয়ের কথা না করে দেয় শান্তির পরিবার। কিন্তু নিষেধ করার পরও শ্রীকান্ত প্রায় প্রতিদিনই শান্তিকে ফোন করে বিয়ের জন্য বিরক্ত করত বলে শান্তি অভিযোগ করেন। এই হত্যাকান্ডের ৩দিন আগেও শ্রীকান্ত ফোন করে তাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবে বলেও হুমকি দেয় শান্তি জানায়।