স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার সাথী খাতুনের প্রেমের ফাঁদে পরে প্রতারনার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট কোর্ট ফরিদপুরে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
অভিযোগ ও মামলা সুত্রে জানাযায়, খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার নারকেলি চাঁদপুর গ্রামের হারুন মোড়লের মেয়ে সাথী খাতুন নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন ছেলেদের সাথে প্রতারনা করে আসছে। জানাযায়, ০৯/১০ মাস পুর্বে ফরিদপুরের মারুফ নামে একটি ছেলের সাথে সাথী খাতুনের পরিচয় হয়। সাথী খাতুনের প্রেমের ফাঁদে পরে যায় ছেলেটি। সাথী নিজেকে কুমারী বলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পরে সাথীর মাধ্যমে সাথীর বাবা হারুন মোড়ল ও মা জাফরিনের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং পরিচয় সূত্রে তাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক হয়। সাথীর মা জাফরিন তাকে বলে তোমার আর সাথীর বিয়ে দিয়ে তোমাদের বিদেশে সৌদি আরব নিয়ে যাব। সৌদি আরব আমার নিকট আতœীয় থাকে তুমি দেশে থেকে এত কষ্ট করার থেকে সৌদি আরব গেলে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবা। তাদের খপ্পরে পরেযায় মারুফ, তাদের সাথে যেহেতু সুসম্পর্ক হয়েছে এবং সাথীর সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেকারনে সরল বিশ্বাসে মারুফ সৌদি আরব যেতে রাজী হয় এবং সৌদি আরব যেতে কত টাকা লাগবে জিজ্ঞাসা করলে তাকে বলে সর্বমোট ৬,০০,০০০/- লাগবে, তুমি যেহেতু আমার হবু মেয়ে জামাই তুমি ৪,০০,০০০/- (চাঁর লক্ষ টাকা) যোগার কর বাকীটা আমি ব্যবস্থা করছি। মারুফ সরল বিশ্বাসে ধারদেনা করে টাকা যোগার করে তাদের জানালে তারা উভয়েরই পরিচিত ব্যাক্তির ফরিদপুরের ভাড়া বাসায় পৌঁছালে মারুফ সাথীর বাবা হারুন মোড়লের হাতে ৪,০০,০০০/- (চাঁর লক্ষ টাকা) তুলে দেয়। সে নিজে টাকা গুনে সাথীর হাতে দেয় এবং সাথী গুনে ঠিক আছে বলে তার সাইড ব্যাগে রেখে দেয়। এরপর সাথীর বাবা হারুন মোড়ল বলে তুমি কোন চিন্তা করোনা তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে আমি তোমাকে ১ মাসের মধ্যে সৌদিআরব পাঠায় দিব। এরপর সাথী মারুফকে হবু স্বামী দাবি করে বিভিন্ন সময় তার প্রয়োজন বলে তাকে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলে ও তার কাছে বিভিন্ন জিনিস আবদার করে , মারুফ সাথীর ছলনা বুঝতে নাপেরে সরল বিশ্বাসে তার চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে দেয় এবং তার বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠায়। এভাবে এক মাস অতিবাহিত হলেও বিয়ের এবং বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে তারা কিছু না বলায় মারুফ জিজ্ঞাসা করলে আজ কাল করে তাকে ঘুরাতে থাকে। হঠাৎ করে গত ২০১৬ সালের জুলাই মাসের ১৭ তারিখে সাথীর মা জাফরিন সৌদি আরব চলে যায়। এরপর সাথী ভুলিয়ে ভালিয়ে মারুফকে প্রেমের অভিনয়ে ভাঙ্গাতে থাকে। এভাবে ২/৩ মাস গত হলে সাথী তার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়, ফোন দিলে ফোনওয়েটিং পায়, রিসিভ করলেও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। পরবর্তীতে মারুফ বিয়ের কথা বললে এবং টাকা ফেরত চাইলে তাকে ফোনদিতে নিষেধ করে এবং বলে তার অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে , তাকে ফোন দিলে মারুফকে নারী নির্যাতনের মামলার হুমকিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। পরে তাকে ফোনদিলে আর ফোন রিসিভ করেনা , একপর্যায় সে ফোনটি বন্ধ করেদেয়। পরবর্তীতে তারা ফরিদপুরে পরিচিত ব্যাক্তির ভাড়া বাসায় গেলে মারুফ খবর পেয়ে গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে তারা অস্বীকার করে দ্রুত ঐ বাসা থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে মারুফ মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সাথী এবং তার মা জাফরিনের চাঞ্চল্যকর তথ্য । ৫/৬ বছর পূর্বে সাথীর সাথে রুপসার ছেলে লিটনের বিয়ে হয়। সেখানে এক কণ্যা সন্তানের জন্মদিয়ে সাথী লিটনের বাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসে। লিটন অনেক চেষ্টা করেও সাথীর সাথে সংসার করতে পারেনা। দুধের শিশুকে ফেলে সে তার বাবার বাড়ীতে চলেযায়। এদিকে সাথীর মা জাফরিনের সাথে রুপসার তোফাজ্জেল নামের এক লোকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জাফরিন তিন ছেলেমেয়ে ফেলে প্রেমিকের ডাকে সারাদিয়ে তার হাত ধরে চলেযায়। এব্যাপারে তোফাজ্জেলের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে সাথী তার নাতীন হয় ও জাফরিন তার ভাতিজি হয় বললেও পরবর্তীতে এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের এক পর্যায় জাফরিনের সাথে তার সম্পর্কের কথা স্বীকার করে এবং তাদের বিয়ে হয়েছিল বলে জানায়। তোফাজ্জেলের স্ত্রীর সাথে কথা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে আমি কিছু জানিনা বললেও পরবর্তীতে তাদের নিয়ে কিছুলেখা হবেনা বললে তিনি বলেন এঘটনায় আমার স্বামীর কোন দোষ ছিলনা ঐ দুশ্চরিত্র মহিলা জাফরিন আমার স্বামীকে ভূলিয়ে ভালিয়ে এঘটনা ঘটিয়েছে আমার সোনার সংসার ভেঙ্গে দিয়েছিল। ওরা যেকোন খারাপ কাজ করতে পারে। ওদের ভয়ে আমরা ঢাকা চলে এসেছি। আমার ছেলে হাফিজুর দশম শ্রেনীতে পরে । আপনারা ওদের এলাকায় খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন ওরা কত খারাপ।
এঘটনার পর সাথীও বাড়ী থেকে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে কনিকা কনা নামে একটি মেয়ের এইচ,এস, সি সার্টিফিকেট নিয়ে সেই নামে মিরপুরে একটি গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরীতে চাকুরীতে ঢুকে । কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ওখানকার এক লাইনম্যানের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা আবাধে ঘোরাফেরা করে, কিছুদিন তাকে ভাঙ্গিয়ে সেখান থেকে অন্যত্র একটি গার্মেন্টস শো রুমে চাকুরীতে যোগ দেয় এবং তার বেশভূষা পাল্টে গেঞ্জী, সর্টকামিজ এবং জিন্স পড়তে শুরু করে।
এদিকে হারুন মোড়ল তার কয়েকজন আতœীয় স্বজনের সহায়তায় তার স্ত্রী জাফরিনকে তার নতুন স্বামীর নিকট থেকে ডিভোর্স করিয়ে বাড়ীতে নিয়ে যায়। কিন্তু জাফরিনের মনতো আর মানেনা কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার তোফাজ্জেলের হাত ধরে টাকায় চলে যায় এবং একটি রুম নিয়ে দুজনে বসবাস শুরু করে। খবর পেয়ে সাথীও তাদের সাথে গিয়ে থাকে । বেশ কিছুদিন পর মহল্লার লোক জানতে পারে প্রকৃত তারা স্বামী স্ত্রী না। তারা মিরপুরের শাহআলী থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায় এবং জাফরিনের স্বামীকে খবর দেয় জাফরিনের স্বামীকে ও তোফাজ্জেলের ভায়েরা ২/৩জন মুচেলকা দিয়ে তাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনে এবং জাফরিনের স্বামী তাকে মারধর করে খুলনার গ্রামের বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
এদিকে সাথী নিজেকে কুমারী এবং খুলনার ধনী ঘের মালিকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে নিজের নাম গোপন করে কনিকা নামে ছেলেদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভাঙ্গাতে থাকে এবং কোন গাইড না থাকায় উশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে থাকে।
মিরপুরে সাথীর সাথে একই ফ্লাটে সাবলেট হিসাবে বসবাসকারী এক মহিলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একটি কোম্পানীর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সাথীর দীর্ঘদিনের অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে সাথীর পেটে বাচ্চা চলে আসে এবং সাথী তখন তাকে বিয়ের কথা বলে কিন্তু সাথীর উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়না এবং তাকে এড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে এনিয়ে তাদের মধ্যে মনমালিন্য হয় এবং একপর্যায়ে সাথী বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে। এতে তার শরীর ভেঙ্গে যায় । এছাড়া বিভিন্ন গার্মেন্টেসের সুপারভাইজার সহ বিভিন্ন লোকের আনা গোনা ও তার কার্যকলাপের জন্য আমরাও তাকে রাগারাগী করেছি, বাড়ীর মালিক তাকে রাগারাগী করে বাড়ী ছেড়েদিতে বলে। পরবর্তীতে সে তার আসবাবপত্র নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ী খুলনায় চলে যায়।
এব্যাপারে নারকেলি চাঁদপুরে বসবাসকারী সাথীর চাচাতো দাদী কুদ্দুস মোড়লের স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আসলে ওরা আমাদের এখানে ছিলনা ওরা রুপসা থাকতো পরবর্তীতে এখানে এসেছে, “চকচক করিলেই সোনা হয়না” ওর মার চরিত্র যেমন খারাপ ওর চরিত্রও খারাপ, ওদের সাথে আমাদের তেমন সম্পর্ক নাই । আমাকে এব্যাপারে আর কিছু জিজ্ঞাসা করবেননা।
সাথীর মামা বিল্লালের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি একজন গাড়ী চালক আমি ওদের খবর রাখিনা তবে এতটুকুন বলতে পারিযে সাথী আর জাফরীন ঢাকা থাকতো সেখানে নাকি অনেক কেলেঙ্কারী করেছে। আমার ভগ্নিপতি হারুন একজন সহজ সরল মানুষ সে তাদের সেভাবে শাষন করতে পারেনাই আর ওরা তাকে কেয়ার করেনা। ওরা যখন ঢাকা ছিল তখন আমার ভগ্নিপতি হারুন কিছুদিন সেখানে গিয়ে লেবারের কাজ করেছে কিন্তু পরবর্তীতে মা এবং মেয়ের কার্যকলাপ ভালনা লাগায় আবার সে গ্রামে ফিরে আসে।
সাথীর চাচতো দাদা গোলাম রসুলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমার মেয়েরা কাজদিয়া লেখাপড়া করে আমি নারকেলি চাঁদপুরে খুব কমযাই তবে সত্য যেটা সেটা বলতেই হবে। ওরা মা মেয়ে দুজনেই ভালোনা।
রুপসার কাজদিয়া বাজারের একজন দোকানদার নাম প্রকাশনা করার শর্তে বলেন, ওই মেয়ের গতিবিধি আমার ভালো লাগেনাই সে বিভিন্ন সময় আমার দোকানে আসতো টুকটাক কেনা কাটা করত, সর্বশেষ কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে বলে আমার নিকট থেকে গলার সেটসহ কিছুজিনিসপত্র কিনে অল্পকিছু টাকা দিয়ে বাকীটা পরে দিবে বলে গেছে আর এ পর্যন্ত আসেনাই। এসব মেয়েদের জন্য ছেলেরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তী হওয়া উচিত।
এব্যাপারে সাথীর মুঠোফোন ০১৯৯১১৫৮০১৫ নম্বরে ও তার বাবা হারুন মোড়লের ০১৬২৪৪২১০২৩ নম্বরে যোগাযোগকরার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।এব্যাপারে ভুক্তভুগি , এলাকাবাসী এবং সুশিল সমাজ এই প্রতারকদের হাত থেকে সমাজকে বাচাঁতে এবং এই দোষী ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তী দাবি করেছেন।